ধান কাটা-মাড়াই শুরু
আমিনুর রহমান খোকন, মহাদেবপুর (নওগঁা) প্রতিনিধি : উত্তরাঞ্চলের শস্যভাণ্ডার খ্যাত নওগঁার মহাদেবপুর উপজেলায় আমন ধান কাটা-মাড়াই শুরু হয়েছে। মাঠের পর মাঠ পাকা ধানের ম-ম গন্ধে মাতোয়ারা চারপাশ। কাস্তের টানে কেউ ক্ষেতের সোনালি ধান কাটছেন, কেউ আটি বঁাধছেন। আবার কেউ কেউ মাঠ থেকে ধান নিয়ে বাড়ি যাচ্ছেন। যেন দম ফেলার ফুরসত নেই কৃষকদের। হাটগুলোতেও নতুন ধানের সরবরাহ বেড়েছে। মৌসুমের শুরুতেই ব্যবসায়ীরা বেশ চড়া দামে ধান সংগ্রহ করছেন। আর ভালো দর পেয়ে খুশি ধানচাষিরা।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০২১-২০২২ খরিপ-২ মৌসুমে উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের ৩০টি ব্লকে ২৮ হাজার ৮৯০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধানের চাষ হয়েছে। এরমধ্যে উচ্চ ফলনশীল (উফশী) জাতের ১৮ হাজার ৫২০ হেক্টর, ১০ হাজার ১৪০ হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের চিনি আতব (সুগন্ধি) এবং ২৩০ হেক্টরে হাইব্রিড ধান চাষ হয়েছে। এ পরিমাণ জমি থেকে ৮৬ হাজার ৬৭০ মেট্রিকটন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। খেঁাজ নিয়ে জানা যায়, গত রোববার দুপুরে আনুষ্ঠানিক ধান কাটা-মাড়াই এর উদ্বোধন করে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। মহাদেবপুর ব্লকের খোশালপুর মাঠে নমুনা শস্য কর্তন করা হয়। ওই গ্রামের আব্দুল জব্বারের ছেলে কৃষক নাহিদ হোসেনের জমিতে রোপণ করা স্বর্ণা-৫ জাতের নির্ধারিত প্লটের ধান কর্তন করে মাঠেই মাড়াই-ঝাড়াই করে ফলন রেকর্ড করে কৃষি অফিস। ১৪ শতাংশ আদ্রতায় বিঘাপ্রতি ১৮ মণ ফলন পাওয়া যায়। এ সময় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রাজশাহী অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালকের কার্যালয়ের উপপরিচালক খয়ের উদ্দিন মোল্লা, তেল জাতীয় ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের মনিটরিং কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অরুন চন্দ্র রায়সহ উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
উপজেলার ধানচাষীরা জানান, স্বর্ণা-৫, সুমন স্বর্ণা ও ব্রিধান-৮৭ জাতের ধান পুরোদমে কাটা-মাড়াই শুরু হয়েছে। স্থানীয় বাজারে ৯৭০ থেকে এক হাজার ৫০ টাকা দামে প্রতিমণ ধান বিক্রি হচ্ছে। বাজারে এমন দাম থাকলে কৃষকরা লাভবান হবেন। তবে চিনি আতব (সুগন্ধি) জাতের ধান আরও ২৫-৩০ দিন পর কাটা-মাড়াই শুরু হবে। তারা আরও জানান, বাজারে যখন আমদানি বেশি হয়, ব্যবসায়ীরা তখন দাম কমিয়ে দেয়। ব্যবসায়ীরা যেন ভরা মৌসুমে সিন্ডিকেট করে দাম কমাতে না পারে; এজন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত বাজার তদারকির দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা। ধান ব্যবসায়ীরা জানান, চাউল কলে ধানের মজুত নিশ্চিত করতে তাদের বেশি দামে ধান কিনতে হচ্ছে। উপজেলা সদরের বিশিষ্ট ধান-চাল ব্যবসায়ী আইনুল ইসলাম বলেন, বাজারে নতুন ধানের সরবারহ ধীরে ধীরে বাড়ছে। দামও ভালো পাচ্ছেন কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অরুন চন্দ্র রায় বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। স্থানীয় বাজারে ধানের দামও বেশ ভালো। এ মৌসুমে প্রত্যেক আমন ধানচাষি অধিক মুনাফা লাভ করবে বলে আশা করছেন তিনি। মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান মিলন বলেন, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কৃষকদের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত করা হলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নিয়মিত বাজার তদারকি করবেন বলেও জানান তিনি।
Leave a Reply